Non-cooperation movement : Montagu – The failure of the Chelmsford Act and the people of India in World War I helped the British government to the fullest. The Indians hoped that in return for aiding the war, the British government would give them the right to autonomy. Such an assurance was given in the proclamation of the Indian Secretary of State Montague in 1918. But the Montagu-Chelmsford Reform Act of 1919 failed to satisfy Indians. Naturally, the expectations of the nationalists were not met and they continued to try to meet their demands through active movements
অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমি (Background of the non-cooperation movement) :
মন্টেগু – চেমসফোর্ড আইনের ব্যর্থতা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের জনগণ ইংরেজ সরকারকে সর্বতােভাবে সাহায্য করেছিল। ভারতবাসী আশা করেছিল যে, যুদ্ধে সাহায্যদানের বিনিময়ে ইংরেজ সরকার তাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেবে। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতসচিব মন্টেগুর ঘােষণায় এই রকমই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে জাতীয়তাবাদীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের দাবি পূরণে তারা সচেষ্ট হতে থাকেন।
অর্থনৈতিক দূরাবস্থা:
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দরুন জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষের সংসার নির্বাহ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কৃষকদের ভূমিরাজস্বের ওপর উপ – কর বসানাে হয়। ভারতীয় কলকারখানাগুলির ওপর চড়া হারে কর বসানাে হয়। এর ফলে কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে। এভাবে অর্থনৈতিক শােষণে কৃষক, মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির মনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র হতে থাকে।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ:
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাওলাট আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ইংরেজ সরকার যে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড করেছিল তাতে সারা দেশে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। খিলাফৎ সমস্যার সমাধান ও এই সময়ে খিলাফৎ সমস্যা নিয়ে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করে হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের এক সুবর্ণ সুযােগের সৃষ্টি করেন।
উপসংহার : এভাবে জাতীয় কংগ্রেস রাওলাট আইন প্রত্যাহার, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের জন্য সরকারের দুঃখপ্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি দাবি, খিলাফৎ সমস্যার সমাধান এবং স্বরাজ অর্জনের দাবি আদায়ের জন্য এক গণ – আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। কংগ্রেসের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার প্রত্যক্ষ ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এভাবে অসহযােগ আন্দোলনের পথ সুগম হয়।
অসহযােগ আন্দোলনের কর্মসূচিঃ
গান্ধিজি পরিচালিত অসহযােগ আন্দোলনের কর্মসূচিকে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতানুযায়ী ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
ইতিবাচক কর্মসূচি : ইতিবাচক অর্থাৎ, গঠনমূলক কর্মসূচিগুলি হল— (১) চরকা ও তাঁতের ব্যবহার, ( ২ ) স্বদেশি শিল্পের উন্নতি সাধন, ( ৩ ) অস্পৃশ্যতা বর্জন, ( ৪ ) তিলক স্মৃতি তহবিলের জন্য এক কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ এবং ( ৫ ) হিন্দু – মুসলিম সংহতি।
নেতিবাচক কর্মসূচি :নেতিবাচক বা বর্জনমূলক কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল— ( ১ ) সরকারি খেতাব বর্জন,( ২ ) সরকারি আদালত বর্জন,( ৩ ) সরকারি স্কুল – কলেজ বর্জন,( ৪ ) আইনসভার নির্বাচন বর্জন ,( 5 ) বিদেশি দ্রব্য বর্জন,( ৬ ) সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন। প্রয়ােজনে সরকারি খাজনা প্রদান বর্জন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। গান্ধিজি এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, Co – operation in any shape or form with this satanic government is sinfull.
অসহযােগ আন্দোলনের প্রসার :
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অসহযােগ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। গান্ধিজি হন এই আন্দোলনের সারথি। গান্ধিজির ডাকে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দেয়। ধনী, দরিদ্র, হিন্দু, মুসলিম, নারী, পুরুষ, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, ছাত্র নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্র ভারতবাসীর এই উদ্দীপনাকে ঘুমন্ত দৈত্যের জেগে ওঠার সঙ্গে তুলনা করেছেন ( The joy and enthusiasm of those days was something special, for the sleeping giant was beginning to awake .)আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন। ছাত্ররা গাধিজি কি জয় ‘ ধ্বনি তুলে স্কুল – কলেজ থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসে। কৃষক – শ্রমিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। কলকাতা ও লাহােরে বিশাল ছাত্র ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়।
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অসহযােগিতা :
জাতীয় কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে পূর্ণ অসহযােগ ঘােষণা করে বিলাতি দ্রব্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় ২০ লক্ষ চরকায় সুতাে কাটা শুরু হয়। ছাত্র ও যুবকরা বিপুল উৎসাহ ও উদ্যমে বিলাতি কাপড়ের দোকানে অহিংসভাবে পিকেটিং আরম্ভ করে। খাদি বস্ত্রের ব্যবহার অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যায়। জাকির হুসেন জামিয়ামিলিয়া ইসলামিয়া শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠা করেন। তিলক স্মৃতি তহবিলে কয়েক মাসেই কোটি টাকা সংগৃহীত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস্ ভারত সফরে আসেন। তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে বয়কট করা হয় ও সমগ্র ভারত জুড়ে হরতাল পালিত হয়।
দমননীতি :
ইংরেজ সরকার তীব্র দমননীতি প্রয়ােগ করতে থাকে। গান্ধিজি ছাড়া প্রায় অন্যান্য সকল কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হন। ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর থেকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতায় সরকারের নতজানু হওয়ার উপক্রম হয়।
অসহযােগ আন্দোলনের গুরুত্ব :
বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম নিরস্ত্র আন্দোলন ’ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
( ১ ) এই আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয়দের কোনাে দাবি পূরণ না হলেও এটিই ছিল ভারতের প্রথম সুসংবদ্ধ গণ – আন্দোলন।
( ২ ) এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেস একটি বৈপ্লবিক সংগঠনে পরিণত হয়। কংগ্রেসের মাধ্যমেই স্বরাজ অর্জন সম্ভব এই বিশ্বাস দৃঢ় হল।
( ৩ ) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মানুষের ভয় কাটিয়ে তুলতে এই আন্দোলন প্রভূত সাহায্য করেছিল।
( ৪ ) ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় । তারা নৈতিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে।
( ৫ ) এই স্বতঃস্ফূর্ত গণ – আন্দোলন ইংরেজ শাসকগােষ্ঠীর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল এই আন্দোলন ভারতীয়দের মধ্যে এক শক্তিশালী নেতিবাচক জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টি করেছে।
( ৬ ) সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও অসহযােগ আন্দোলন উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি সামাজিক ব্যাধি সম্পর্কে মানুষ সচেতন হয়।
( ৭ ) খাদি ও কুটিরশিল্পের বিকাশ ঘটে।
অসহযােগ আন্দোলনের কারণ :
মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ব্যর্থতা :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের জনগণ ইংরেজ সরকারকে সর্বতােভাবে সাহায্য করেছিল ভারতবাসী আশা করেছিল যে, যুদ্ধে সাহায্যদানের বিনিময়ে ইংরেজ সরকার তাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেবে। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতসচিব মন্টেগুর ঘােষণায় এই রকমই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে জাতীয়তাবাদীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণে তারা সচেষ্ট হতে থাকে।
অর্থনৈতিক অসন্তোষ :
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষের সংসার নির্বাহ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কৃষকদের ভূমিরাজস্বের ওপর উপ – কর বসানাে হয়। ভারতীয় কলকারখানাগুলির ওপর চড়া হারে কর বসানাে হয়। এর ফলে কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে। এভাবে অর্থনৈতিক শােষণে কৃষক, মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির মনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র হতে থাকে।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ :
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাওলাট আইনের। প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ইংরেজ সরকার যে জঘন্যতম। হত্যাকাণ্ড করেছিল তাতে সারা দেশে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।
খিলাফৎ সমস্যার সমাধান :
এই সময়ে খিলাফৎ সমস্যা নিয়ে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করে। হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের এক সুবর্ণ সুযােগের সৃষ্টি করেন।
আন্দোলনের প্রস্তুতি:
এভাবে জাতীয় কংগ্রেস রাওলাট আইন প্রত্যাহার, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের দুঃখপ্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি দাবি, খিলাফৎ সমস্যার সমাধান এবং স্বরাজ অর্জনের দাবি আদায়ের জন্য এক গণ – আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। কংগ্রেসের ৩৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার প্রত্যক্ষ ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের কর্মসূচী নেওয়া হয়। এভাবে অসহযােগ আন্দোলনের পথ সুগম হয়।
প্রত্যাহারের কারণ : উত্তরপ্রদেশের গােরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা থানায় একদল উন্মত্ত জনতা আগুন ধরিয়ে দিলে ২২ জন পুলিশ জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় গান্ধিজি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হন। জনগণ সহিংস ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে দেখে তিনি অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।