Mother Teresa : Just as the Aadhaar lamp of Ala burns itself and separates others, so some great souls have been born in this world who have given their lives in the service of others. They have houses everywhere. Their absolute relatives are spread all over the country. They cannot keep themselves captive in any country, territory or population. So Mother Teresa, the mother of Art, Mother Teresa is a woman who crossed the Seven Seas Tera River and landed on Indian soil who loved this country and made India her own. The only identity she has to the world is Mother Teresa, Merciful Mother Teresa.
বিশ্ব জননী মাদার টেরেসা (Mother of the World Mother Teresa):
“নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান ক্ষয় নাহি তার ক্ষয় নাই” -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আলাের আধার প্রদীপ যেমন নিজেকে পুড়িয়ে অপরকে আলােদান করে থাকে, তেমনি এমন কিছু মহাপ্রাণ এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন যারা অপরের সেবায় নিজের জীবনকে নিঃশেষে দান করেছেন। এঁদের ঘর থাকে সর্বত্র। দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকে এঁদের পরম আত্মীয়েরা। কোনাে একটি দেশ, ভূখণ্ড বা জনসমষ্টির মধ্যে এরা নিজেদের বন্দি রাখতে পারে না। তাই সাত সমুদ্র তেরাে নদী পেরিয়ে ভারতের মাটিতে অবতীর্ণ হন এমন এক নারী যিনি এই দেশকে এই দেশের মানুষকে ভালােবেসে ভারতবর্ষকেই নিজের দেশ করে নিয়েছিলেন , তিনি মাদার টেরেসা, আর্তের জননী। বিশ্ববাসীর কাছে যার একটিই পরিচয়, তিনি মাদার।
“কোন আলােতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস”।
মাদার টেরেসার জন্ম, পরিচয় ও শিক্ষা (Mother Teresa’s birth, identity and education):
মাদার টেরেসার পিতৃভূমি আলবেনিয়া হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল। যুগােশ্লাভিয়ার স্কুপেজ শহরে 1910 খ্রিস্টাব্দের 27 আগস্ট, এক ধনী খ্রিস্টান পরিবারে। ছােটোবেলায় তাঁর নাম ছিল অ্যাগনেস। শৈশবের শিক্ষা সাঙ্গ করে অ্যাগনেস ডাবলিনের মিশনারি মঠ লরেটো অ্যাবে যােগদান করেন। পিতা-নিকোলাস এবং জননী ড্রানাফিল বার্নাডের কন্যা অ্যাগনেস গাংক্সা বেজাস্কা হিউ লরেটোতে যােগদান করার সময় সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং তার নাম হয় মাদার টেরেসা।
মাদার টেরেসার মানবধর্মে দীক্ষা(Mother Teresa’s initiation into human religion):
অষ্টাদশী তরুণী ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চিরদিনের মতাে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। লরেটোর তরুণী সন্ন্যাসী এসে পৌছালেন ভারতে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ভারতের দুঃখী মানুষের কথা তার হৃদয়ে বেদনার অতল আহ্বান তুলত। তাই তিনি আর্তমানুষের সেবা করার আদর্শ নিয়ে ১৯২৯ খিস্টাব্দে হাজির হলেন কলকাতায়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রহণ করলেন ভারতীয় নাগরিকত্ব। তিনি বললেন-
“I am an Albenian by chance but an Indian by choice”.
এই দেশ হল তাঁর নতুন জন্মভূমি,স্বদেশ। তিনি হলেন এই ভারতের ভূমিসূতা। কলকাতায় এসে সেন্টমারি হাইস্কুলে শিক্ষিকা রূপে শুরু হল মাদারের কাজ। এই স্কুলের পাশে ছিল একটি বস্তি। সেখানকার অধিবাসী দের দুঃখদুর্দশা দেখে মাদারের অন্তর উদ্বেল হয়ে ওঠে। এসময় একদিন ট্রেনে চড়ে দার্জিলিং যাওয়ার পথে তিনি মনের মধ্যে জিশুর বাণী উপলব্ধি করলেন। বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দরিদ্রের সেবায় আত্মনিয়ােগ করলেন। মাদার পরবর্তী কালে বলেছেন-আমি দার্জিলিং যাচ্ছিলাম। পথে ট্রেনের কামরায় আমি যেন আহ্বান শুনতে পাচ্ছিলাম। কে যেন বলল সব ত্যাগ করে আমাকে অনুসরণ করাে। বস্তিতে বস্তিতে দরিদ্রের সেবা করলেই আমার সেবা করা হবে। দার্জিলিং-এর পথে ট্রেনের মধ্যে নিৰ্ব্বরের শব্দ ভঙ্গ হল। এরপর আপন জীবনাদর্শ দিয়েই তিনি বােঝালেন-
“জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর “।
মাদার টেরেসার সেবাকেন্দ্র ও শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা (Establishment of Mother Teresa Service Center and Education Center):
অবশেষে তিনি নিজেকে সমর্পণ করলেন আর্তের সেবায়। পরনে নীল পাড় সাদা সুতির শাড়ি, বাম কাধে পবিত্র কুশ। কলকাতার বস্তিতেই তাঁর সেবা যজ্ঞে প্রথম আহুতি শুরু হল, মাত্র 5 টাকা সম্বল করে এন্টালি অঞলে গুটি কয়েক ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে তিনি একটি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তােলেন। তারপর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় আর্তমানুষের আপনজন মিশনারিজ অফ চ্যারিটি-এর সেবাদল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কালিঘাটে নির্মিত হল নিমর্ল হৃদয়। অভাগা অনাথ অসহায় মানুষের দল খুঁজে পেল নিজস্ব ঠিকানা। মৌলালিতে অনাথ শিশুদের জন্য ‘নির্মল শিশুভুবন’, উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে নির্মিত হল কুষ্ঠাশ্রম। নির্মিত হল নির্মলা কেনেডি সেন্টার।
স্নেহ-মায়া-মমতা আর ভালােবাসার মূর্ত প্রতীক মাদার পরম যত্নে তুলে নিলেন সমাজের চোখে ঘৃণ্য কুষ্ঠ রােগীকে। বললেন আমি যখন কুষ্ঠ রােগীর সেবা করি তখন ভাবি আমি ভগবানের সেবা করছি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় শরণার্থীদের মা হয়ে উঠলেন তিনি। কেবলমাত্র কলকাতা নয় ভারতেও নয় গােটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল মাদারের সেবাকেন্দ্র। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, জাপান, পােল্যান্ড, রাশিয়া, বাংলাদেশ প্রভৃতি জায়গায় পৌছে গেল মাদারের স্নেহ স্পর্শ। তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে শােনালেন- ‘শিশুরাই জিশু’, উলঙ্গ শিশুকে পােশাকে ভূষিত করাে; গৃহহীন শিশুকে আশ্রয় দাও আর তােমার নিজের ভবনটি শান্তির স্বর্গ এবং প্রীতির আনন্দ নিকেতনে পরিণত করাে।
মাদার টেরেসার বিশ্বস্বীকৃতি ও সম্মানলাভ (Gain world recognition and respect for Mother Teresa):
গােটা পৃথিবী এই জগজ্জননীকে সম্মান জানাল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান Nobel মাদারের শিরভূষণ হয়ে নিজেই সম্মানিত হল। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পান। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে গােটা ভারত প্রণত হয়ে মাদারকে ভারতরত্ন হিসেবে স্বীকৃতি দিল। আফ্রিকায় তিনি হলেন অ্যাঞ্জেল অফ পিস। পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থ তিনি দান করেন আর্তের সেবায়। এ ছাড়া ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে পান ম্যাগসেসাই সম্মান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পান পপাপের শান্তি পুরস্কার। কেম্বুিজ ও অক্সফোর্ড তাকে দিয়েছে ডক্টরেট উপাধি, ব্রিটেন তাকেদিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান অর্ডার অব মেরিট; নিউইয়র্ক থেকে তিনি পেয়েছেন গুড সামারিটান অ্যাওয়ার্ড। আসলে পৃথিবী ব্যাপী পুরস্কার তাঁর কাছে এসে নিজেরাই পুরস্কৃত হয়ে ওঠে।
বিশ্বজননী মাদার টেরেসার প্রয়াণ (World Mother Teresa dies):
বিংশ শতাব্দীর এই মহীয়সী ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর অমৃতলােকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শুক্রবার রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে মাদার কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির। সদর দপ্তর মাদার হাউসে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মাদারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কলকাতার রাজপথের ওপর দিয়ে সেন্ট টমাস গির্জা থেকে তার অন্তিম যাত্রার সমাপ্তি ঘটে মাদার হাউসেই। সেখানে ধরিত্রীর শীতল অঙ্কে তার চিরশয্যা রচিত হয়।
আরও পডুনঃ স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী