সংবিধানের ৭৩ তম ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইন | 73rd and 74th Constitution Amendment Acts

সংবিধানের ৭৩ তম ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইন | 73rd and 74th Constitution Amendment Acts

সংবিধানের ৭৩ তম ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইন (73rd and 74th Constitution Amendment Acts):-

❏ ৭৩ তম সংবিধান সংশোধন (১৯৯২):- ৭৩ তম সংবিধান সংশোধনী আইনটি প্রণীত হয় ১৯৯৩ সালের ২০ শে এপ্রিল। আলোচ্য সংশোধনী আইনটিতে সংবিধানের অষ্টম অংশের (Part -VIII) পর নবম অংশ (Part-IX) -টি সংযুক্ত হয়। সংযুক্ত এই নতুন অংশটিতে যে সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ আছে সেগুলি হলঃ পঞ্চায়েতের গঠন; আসন সংরক্ষণ; পঞ্চায়েতের কার্যকাল; পঞ্চায়েতের সদস্যদের অযোগ্যতা; পঞ্চায়েতের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব; সংবিধানের ২৮০ ধারার সংশোধন , একাদশ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি প্রভৃতি।

❏ ৭৪ তম সংবিধান সংশোধন (১৯৯২):- ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইনটি ১৯৯৩ সালের ২০ শে এপ্রিল প্রণীত হয়। আলোচ্য সংবিধান সংশোধনী আইনটিতে সংবিধানের নবম অংশ (Part – IX) -এর নবম অংশ (Part – IXA) সংযুক্ত হয়। সংযুক্ত এই নতুন অংশটিতে মিউনিসিপ্যালিটির গঠন; বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কমিটিসমূহের গঠন; আসন সংরক্ষণ; মিউনিসিপ্যালিটির কার্যকাল; সদস্যদের অযোগ্যতা; মিউনিসিপ্যালিটির ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও দায়িত্বসমূহ; সংবিধানের ২৮০ ধারার সংশোধন, দ্বাদশ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

■ ভারতের সংবিধানের ৩৫৫ নং ধারার বিবরণ

উত্তর:: বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে এবং আভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে রাজ্যগুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব কেন্দ্রের (৩৫৫ ধারা)। এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রপতি সমগ্র দেশে বা কোন অংশে জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন (৩৫২ ধারা)। জরুরী অবস্থায় সকল রাজ্যের শাসন বিভাগ শাসনকার্য পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে চলতে বাধ্য। সংবিধানের ৩৫৫ ধারা বলে বহিঃশক্তির আক্রমণ ও আভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ থেকে রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য এবং অঙ্গরাজ্যে সংবিধানসম্মত প্রশাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সংবিধানের এই ব্যবস্থা অঙ্গরাজ্যের সাংবিধানিক সরকারের উপর একটি স্থায়ী সীমাবদ্ধতা। এই সুবাদে রাজ্য সরকার সবসময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্যের অধীন। কেন্দ্রীয় সরকার ৩৫৫ ধারায় সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পাদনের যুক্তি দেখিয়ে রাজ্যগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারে।

■ ভারতের সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারার বিবরণ:-

উত্তর:: ৩৫৬ ধারায় রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করার কথা উল্লেখ আছে। এই ঘোষণাকে রাজ্যভিত্তিক জরুরী অবস্থা (State Emergency) বা রাষ্ট্রপতির শাসন (President’s Rule) -ও বলা হয়ে থাকে। কোন রাজ্যের রাজ্যপাল বা অন্য কোন সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে সেই রাজ্যের শাসনব্যবস্থা শাসনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না বা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, তা হলে তিনি শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মূলতঃ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে এ ধরনের ঘোষণা করেন।

অনেক সময় কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের রাজনীতি-বিষয়ক কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আবার ৩৬৫ ধারা অনুসারে কোন রাজ্যসরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মানলে বা মানতে ব্যর্থ বা অক্ষম হলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি করতে পারেন। ৩৫২ ধারার জাতীয় জরুরী অবস্থার ঘোষণা পার্লামেণ্টে যেভাবে অনুমোদিত হয়, ৩৫৬ ধারার শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার ঘোষণাও একইভাবে পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হবে।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা দরকার যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝায় সংবিধানে তা পরিষ্কার করে বলা হয় নি। এ বিষয়ে কোন স্থায়ী সংজ্ঞা বা সর্বজনগ্রাহ্য মত নেই। এই কারণে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সম্পর্কিত ৩৫৬ ধারার প্রয়োগ প্রসঙ্গে ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে বিরোধ-বিতর্কের শেষ নেই।